অনুবাদ: পান্থ বিহোস | ছবি: রজত
গভীর জঙ্গলে বাস করে সিংহটা। ওর ভয়ে সবাই তটস্থ। নিজেকে বনের রাজা হিসেবে ঘোষণা দিয়ে সে সবার ভয় আর শ্রদ্ধা অর্জন করে নিয়েছে। তার আশপাশে জঙ্গলের প্রাণীরা আসতে পারে না। সামান্য কারণেই তার মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে যায়। আর মেজাজ বিগড়ালেই হলো। সামনে যাকে পায় তাকেই আঘাত করে বসে কারণ ছাড়াই। তার এমন আচরণের জন্য বনের সব প্রাণী ভয়ে থাকে। এমনকি সে যখন ঘুমায়, তখনও সবার ভেতর ভয়টা কাজ করে।
এই ভয়ানক সিংহটা যে বনে থাকে, সেই বনে ছোট্ট এক ইঁদুর ছানাও থাকে। সব বিষয়ে আগ্রহের শেষ নেই তার। সিংহ যে গুহাতে থাকে, সেটা দেখার খুবই আগ্রহ জন্মালো ইঁদুর ছানার। একদিন সিংহটা গুহা ছেড়ে গেলো খাবার খেতে। এই ফাঁকে ইঁদুর ছানাটা সিংহের গুহার কাছে গেলো। ভেতরে খুবই অন্ধকার। ইঁদুর ছানা ভয় পেলো কিন্তু তার অনেক আগ্রহ আর সাহস। ফলে গুহার ভেতরে প্রবশে করলো। সিংহের বিশাল পায়ের ছাপ দেখে ভয় পেলো ইঁদুর ছানা। ভাবলো সিংহ ফিরে আসার আগেই সে এখান থেকে চলে যাবে। কিন্তু তখনি শুনতে পেলো সিংহের পায়ের শব্দ। ইঁদুর ছানা ভয়ে আতকে উঠলো। এখন উপায়?
সিংহটা নদীতে পানি খেয়ে এখন গুহায় এসে বিশ্রাম নেবে। এদিকে ভয় আর আতঙ্কের মধ্যেই ইঁদুর ছানাটা গুহার একপাশে একটা আড়াল দেখলো। সেখানে নিজেকে লুকিয়ে ফেললো। আর তখনি সিংহটা গুহাতে প্রবেশ করলো। গুহামুখে পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়লো আর অমনি ঘুমিয়ে পড়লো। সিংহের নাকডাকার শব্দে জঙ্গল কেঁপে কেঁপে উঠতে লাগলো। বনের রাজা বলে কথা! ইঁদুর ছানা যখন বুঝতে পারলো সিংহটা গভীর ঘুমে, সে ধীরে ধীরে আড়াল থেকে বেরিয়ে আসলো। তারপর পায়ে পায়ে এগিয়ে গেলো গুহামুখের দিকে। খুবই আস্তে আস্তে যাচ্ছিলো ইঁদুর ছানাটা আর ভয়ে কাঁপছিলো।
কিন্তু ওর দুর্ভাগ্য! ওর ছোট্ট লেজটা সিংহের হাঁটুতে লেগে গেলো। আর তখনি সিংহটা জেগে গেলো। সিংহ অবাক হয়ে দেখলো_ এক পুঁচকে ইঁদুর ওর গুহায়।
ইঁদুর ছানা ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে দৌড় দিলো। কিন্তু সিংহটা অনায়াসে তার বৃহৎ থাবা মেলে দিয়ে ইঁদুরটার লেজ ধরে ফেললো। আর ইঁদুরটা ভয়ে কেঁদে ফেললো জোরে। তারপর অনুনয়ের সুরে বলতে লাগলো_ ‘মহারাজা! আমাকে মাফ করুন। আমি আপনাকে জাগাতে চাইনি। আমি আপনার গুহা দেখতে এসেছিলাম আর এখন বেরিয়ে যাচ্ছিলাম। দয়া করে আমাকে যেতে দিন। আমি আপনার মহানুভবতা কোনোদিন ভুলবো না। আমাকে বাঁচার একটা সুযোগ দিন। কথা দিচ্ছি আমি বাকিটা জীবন আপনার সেবা করবো। এমনকি আপনার বিপদ থেকেও উদ্ধার করবো জান-প্রাণ দিয়ে।’
ইঁদুরটার কথা শুনে বৃহৎ সিংহটা হেসে ফেললো। ধুরর! পুঁচকে ইঁদুর ছানা কীভাবে তাকে সাহায্য করবে? কিন্তু তবু সিংহটা ইঁদুর ছানাটাকে ছেড়ে দিলো। ইঁদুর ছানা নিজের জীবন নিয়ে দ্রুত ফিরে গেলো।
২.
কিছুদিন পরের কথা। সিংহটা বীরদর্পে বনের ভেতর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। খেয়ালই করেনি শিকারির জাল সামনে বিছানো। তাই সে জালে আটকা পড়লো। যতোই ছুটতে চেষ্টা করলো, সিংহটা ততোই জালে আরও ভালো করে জড়িয়ে পড়লো। তাই দেখে সিংহটা অসহায় বোধ করলো আর জোরে হুঙ্কার দিতে লাগলো। সিংহের হুঙ্কারে জঙ্গল কেঁপে কেঁপে উঠতে লাগলো। জঙ্গলের প্রতিটা প্রাণী সিংহের গর্জন শুনতে পেলো। শুনতে পেলো সেই ছোট্ট ইঁদুর ছানাটাও।
‘সিংহ মনে হয় কোনো সমস্যায় পড়েছেন।’ ভাবলো ইঁদুর ছানাটা। ‘তাকে সাহায্য করার এটাই আমার সুযোগ।’
ইঁদুর ছানাটা এও বুঝতে চেষ্টা করলো শব্দটা কোন দিক থেকে আসছে। যখন বুঝতে পারলো, তখন অই দিকেই দৌড়াতে শুরু করলো। একটু গিয়েই সে দেখলো সিংহটা শিকারির জালে আটকে পড়েছে।
‘নড়াচড়া করবেন না জাঁহাপনা। আপনার জালের দড়িগুলো দ্রুত কেটে দিচ্ছি। আপনি শিগগিরই মুক্ত হবেন’_ বলেই ইঁদুরটা দ্রুত নিজের ধারালো দাঁত দিয়ে জালের দড়িগুলো কাটতে লাগলো। আর সিংহটা মুক্ত হয়ে গেলো।
‘আমি বিশ্বাসই করতে পারছি না, এই ছোট্ট ইঁদুর ছানাটা আমার জীবন বাঁচিয়েছে। আমি ভুল ভেবেছিলাম সেদিন।’ খুব আন্তরিকতার সাথে সিংহটা বললো। অই দিন থেকেই ইয়াব্বড় সিংহ আর এইটুকুন ইঁদুর ছানার মধ্যে ভাব হয়ে গেলো। এরপর থেকে তারা বনে বন্ধু হয়ে ঘুরে বেড়াতে লাগলো।