বছর ঘুরে, আবারও এলো ঈদ আনন্দ।
আর আর সবার মতো আপনিও নিশ্চয় ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে প্রস্তুতি শুরু করছেন। কেনাকাটা চলছে ঈদের পোশাক আর নিত্য প্রয়োজনীয় ব্যবহার্য জিনসিপত্র। কেউ কেউ আবার কিনছেন একাধিক পোশাক। একটা পড়বেন সকালে তো অন্যটা দুপুরে। দুপুরেরটা পাল্টে পড়বেন বিকেলের ড্রেসটা। আর রাতের জন্য তো কিনেছেনই। তাই না?
অথচ, আমাদের দৃষ্টিটা একটু ঘুরালেই, আমাদের আশেপাশেই দেখবো অনেক পথকলি রয়েছে- যারা ঈদ আনন্দ কি সেটাই জানে না। ঈদের পোশাক তো দূরের কথা, দৈনন্দিন ক্ষুধা নিবারনের ব্যবস্থাই তাদের নেই। তাদের কাছে ঈদ আনন্দ স্বপ্ন। ঈদ তাদের কাছে রঙিন হয় না কখনোই। সাদাকালো জীবনই যাদের নিত্যদিনের পথচলা।
আমরা কি পারি না আমাদের দৃষ্টিটা একটু মেলে ধরতে? অথচ সেজন্য বাড়তি কোনো কষ্ট কিংবা চেষ্টারও কিন্তু কোনো দরকার নেই। শুধুমাত্র একটু সদিচ্ছা হলেও সেসব পথকলিগুলো ফুল হয়ে আনন্দে ফুটে উঠতে পারে অনায়াসে। কীভাবে?
চাই যে তোমার বন্ধুতা…
আপনি যে শার্ট কিনলেন তিন হাজার টাকায় এতে কোনো আপত্তি নেই। কারও থাকারও কথা না। আপনার আছে তাই আপনি কিনতে পেরেছেন। কিন্তু আপনি চাইলেই তো সেটা তিন হাজার টাকায় না কিনে আড়াই হাজার টাকায় অন্য একটা শার্ট কিনতে পারতেন। পাঁচশো টাকা দিয়ে পথকলিদের জন্য তিনটা শার্ট হয়। জানেন সেটা? ভেবে দেখেছেন কখনও?
কিংবা হতে পারে না যে, ঈদের দিনের সকাল, দুপুর, বিকেল, রাতের জন্য আলাদা চারটা ড্রেস না কিনে তিনটা কিনলেন? সকাল, দুপুর আর রাত? তাহলে তো কিন্তু অনায়াসে একটা ড্রেসের টাকা আপনার থেকে যাচ্ছে। চাইলেই সেই টাকাটা আপনি পথকলিদের জন্য ব্যয় করতে পারেন। ওদের মুখের সুন্দর হাসিটা ফুটিয়ে তোলা আপনার জন্য কতই না সহজ! শুধু বন্ধুত্বপূর্ণ একটা দৃষ্টিকোণই বদলে দিতে পারে ওদের অন্ধকার মুখটা দিনের রঙিন আলোর মতো। পারে না?
সবে মিলে করি কাজ…
কিংবা ধরুণ বন্ধুরা মিলে ঠিক করলেন- ঈদের পরদিন বেড়াতে যাবেন কক্সবাজার। কিংবা ভারত বা নেপালে। তা ধরুন সেখানে তো এক একজনের কম করে হলেও বিশ হাজার টাকা খরচ হবে। সেখানে যদি প্রতিজন পাঁচশ টাকা কম খরচ করেন তাহলে কিন্তু কারও আনন্দ কম হবে বলে মনে হয় না। শুধু মাত্র যেকোনো একবেলার খাবারে একটা আইটেম কম খেলেই সেটা হবে। যদি আপনার দশ জন বেড়াতে যান, তাহলে দশ জনের পাঁচশ টাকা করে হয় পাঁচ হাজার টাকা। এই পাঁচ হাজার টাকায় অনেকগুলো পথকলির ঈদের দিনটা হয়ে উঠবে অসাধারণ স্বপ্নীল একটা রঙিন দিন।
খেয়াল করলেই বুঝতে পারবেন- পাঁচশ টাকার তুলনায় সেই আনন্দটা আরও কত অপরিসীম আপনার কাছে। এই আনন্দ শত হাজারবার আপনার মাঝে ধরা দিতে পারে। প্রয়োজন শুধু একটু উদ্যোগের। একটু সদিচ্ছার।
কীভাবে কী করবেন?
এতোক্ষণ তো টাকা সংগ্রহের কথা বলা হলো। এখন জানা দরকার কীভাবে কী করবেন? মানে এতো এতো পথকলি কোথায় পাবেন? কীভাবে ওদের মাঝে এগুলো বিলিয়ে দিতে পারেন?
কাজটা করতে পারেন দু’ভাবে- ১. নিজেরাই বিলি করতে পারেন রাস্তাঘাটে, পার্কে, রেলস্টেশনে ঘুরে ঘুরে। অথবা ২. আপনাদের সংগৃহিত টাকাগুলো কোনো দাতব্য প্রতিষ্ঠানে দান করতে পারেন, যারা পথকলিদেরকে সাহায্য করে থাকেন।
আর তৃতীয় একটা বিকল্প আছে। সেটা হচ্ছে- আজকাল জনপ্রিয় সোশ্যাল মাধ্যম ফেসবুক ব্যবহার করেও অনেকে বিভিন্নজনের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে সরাসরি পথকলিদের সাহায্য-সহযোগিতা করে থাকেন। আপনিও যেহেতু ফেসবুক ব্যবহার করেন, সুতরাং ফেসবুকে তাদেরকে খুঁজে তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। ফেসবুকে ঢুকে সার্চ দিলেই তাদের গ্রুপ কিংবা ফ্যানপেজ পেয়ে যাবেন।
এরকম কিছু ফেসবুক একটিভিস্টদের মধ্যে আছে- আমরা খাঁটি গরিব, যোগাযোগ করুন রাকিব কিশোরের সাথে। উনারা প্রতি বছর পথশিশুদের মাঝে বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে থাকেন। সবাই বন্ধু-বান্ধব বা ফেসবুক ফ্যান। যদিও কিছুদিন আগে উনারা এর কার্যক্রম বন্ধ করে নতুন উদ্যোগে অন্য কিছু শুরু করার কথা ঘোষণা দিয়েছেন। তবে তাদের সাথে যোগাযোগ করলে আপনার কাজ হয়ে যাবে।
কথা বলতে পারেন বেড়াই বাংলাদেশ গ্রুপের কর্ণধার মাহমুদ হাসান খান ভাইয়ের সাথে। উনি সারাদেশ ব্যাপী উনার গ্রুপের অনেককে নিয়েই ঘুরে বেড়ান। এবং যেখানেই যান, ওখানকার সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য কিছু না কিছু দিয়ে আসেন। টাকা সংগ্রহ করা হয় পর্যটক এবং উনার নিজস্ব তহবিল থেকেই। এই উদ্যোগটা খুবই সুন্দর এবং সাবলীল। বছরব্যাপী বেড়াই বাংলাদেশের কার্যক্রম চলে। এমনকি রোজা ও ঈদেও এর ব্যতিক্রম হয় না।
আরও একটি প্রতিষ্ঠানের কথা এই মুহূর্তে মনে পড়ছে- মজার ইশকুল। যোগাযোগ করতে পারেন আরিফের সাথে। সেই সব ব্যবস্থা করে দেবে।
একটি কথা ভুলবেন না!
কাজটা করার আগে নিজেকে প্রশ্ন করুন- কেন এই কাজটা করছেন? নিজের নাম ফুটানোর জন্য? নাকি মনের আনন্দের জন্য? যদি প্রথমটি হয়, তাহলে এই কাজ আপনার নয়। কেননা, এখানে বাহাদুরি দেখানোর কিছু নেই। সুবিধাবঞ্চিত কিছু শিশুর মাঝে নিজের আনন্দটা শেয়ার করলেন, এই যে মনের আনন্দ, এরচেয়ে বড় কিছু আর নেই সেটা তখনই বুঝতে পারবেন যখন মনের ইচ্ছাতে তাগিদ অনুভব করবেন কাজটা করার জন্য। সুতরাং এই ব্যাপারটা কিছুতেই ভুলা যাবে না।
ঈদ হোক সবার
কিছু শেয়ার করলে সেটা কখনও কমে না, বরং বাড়ে। হোক সেটা আনন্দ কিংবা দুঃখ। সেই হিসেবে দুঃখ শেয়ার করার চেয়ে আনন্দ শেয়ার করলেই কি ভালো নয়? সুতরাং ঈদ হোক সবার। হোক না সেটা যতো ছোট করেই, হোক না সেটা যতো অল্প পরিসরে, আয়োজন তো। আজকে যেই কাজটা শুরু করলেন অল্প কিছু একটার মাধ্যমে; পাঁচ বছর পরেই এই অল্প উদ্যোগই হয়ে যাবে বিরাট কিছু। আমি নিশ্চিত। সুতরাং সাধ্য যাই থাকুক, শেয়ার করতে ভুলবেন না!
ঈদ হোক সবার, ঈদ হোক আনন্দ। ঈদ মোবারক।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.