আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সাথে জড়িয়ে পড়া ফেসবুকের একটা লেখাই তাকে উদ্বুদ্ধ করলো আর তিনি লিখে ফেললেন পুরো এক উপন্যাস। তাও রীতিমতো হোমওয়ার্ক এবং ফিল্ডওয়ার্ক করে। উপন্যাসটা লেখার সময় মাসউদের সাথে আমার দুয়েকবার দেখাও হয়েছিলো। তার ব্যস্ততা এবং কর্মতৎপরতা দেখে তখনই বুঝেছিলাম কিছু একটা হচ্ছে। কিছু আভাসও মাসউদ দিয়েছিলেন।
তারপর একদিন ছাপা হলো তার এই পরিশ্রম করে তৈরি করা আখ্যানলিপি- মনোবিজ্ঞান নিয়ে ফিকশন লিখে জনপ্রিয় হওয়া মোহিত কামালের শব্দঘর পত্রিকায়।
নিজের সঙ্গে একা
উপন্যাসের নামটাই আপনাকে ভাবতে তাড়িত করবে এটা একটা দুঃখজাগানিয়া লেখা। আসলে তাই-ই। বৃদ্ধাশ্রমে দুঃসহ সময় কাটানো এক মা তার আদরের সন্তানকে লিখছেন এক দীর্ঘ চিঠি। সেই চিঠির করুণ আর্তনাদ আমাদের মনকে স্পর্শ করে যায়। নিজের মায়ের প্রতিও ভালোবাসা তৈরি হয় নতুন করে; যখন পাঠক বইটা পড়ে নতুন করে বুঝেন, জানেন কেমন করে মা তাকে তিল তিল করে বড় করে তুলেছিলেন।
এক নজরে…
বইয়ের নাম: নিজের সঙ্গে একা
লেখক: মাসউদ আহমাদ
প্রকাশক: সময় প্রকাশন
প্রথম প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ২০১৬
প্রচ্ছদ: ধ্রুব এষ
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ১১২
মূল্য: ১৭৫.০০ টাকা
কাহিনী সংক্ষেপ:
কুসুম বেওয়া ছিলেন স্কুলের টিচার। এক ছেলে, এক মেয়ে আর স্বামী নিয়ে ছিলো সংসার। স্বামী মারা যাওয়ার পর সন্তানদের মানুষ করার দায়িত্ব নিজের কাধে চেপেছিলো। যা তিনি যথার্থভাবে করেছিলেন বলেই মনে করেন। এক সময় ছেলে বড় হয়, বিয়ে করে। মেয়েকেও বিয়ে দেন।
কষ্টের টাকায় জমি কিনে করা এক তলা বাড়িতে ভালো লাগে না পুত্রবধুর। সেই সূত্রে পুত্রেরও। তাই বিক্রি করে মাল্টিকালারড পুত্র এবং পুত্রবধু কিনেন ফ্ল্যাট। কিন্তু সেখানে ছেলে, ছেলেবউ আর নাতি-নাতনিদের স্থান হলেও, জায়গা হয় না কুসুম বেওয়ার। তাকে স্থান নিতে হয় বৃদ্ধাশ্রমে।
সেখানে দীর্ঘদিন বাস করার কারণেই প্রায় ২০০ জন বৃদ্ধ এবং বৃদ্ধার চোখে তিনি দেখেন সেখানকার ভোগ-বিলাস-কষ্ট-যাতনা। বৃদ্ধাশ্রমে সবই আছে- নিয়মমতো খাবার, প্রার্থনার জায়গা, ডাক্তার, চিকিৎসা, সেবা। তবুও কী যেন নেই! সেই না থাকার বেদনায় দীর্ঘশ্বাসে ভারি হয়ে যাওয়া বৃদ্ধাশ্রমের আখ্যানলিপি লিখিত হয় কুসুম বেওয়ার চিঠি।
যা ভালো লেগেছে:
বিষয়টি বেশ ভালো। বর্ণনাশৈলী চমৎকার। মাসউদ আহমাদের বাক্যগঠন, ঘটনার পরম্পরা বিন্যাস, শব্দচয়ন সুন্দর। অন্যান্য লেখার মতো এই আখ্যানটিও মাসউদ বেশ গুছিয়ে সাজিয়েছেন। তথ্যের সমাহার, সাহিত্যের রসবোধ ভালো। শব্দের গাঁথুনি দিয়ে হৃদয়ের গহীনে দুঃখ জাগিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন লেখক, কোনো সন্দেহ নেই। তথ্যবহুলও বটে।
যা ভালো লাগেনি:
“ধীর পায়ে হেঁটে এসে বারান্দার উত্তর মাথায় এসে দাঁড়ান কুসম,…” – এরকম দুর্বল বাক্য কোথাও কোথাও পরিলক্ষতি হয়েছে (যেমন: পৃষ্ঠা ৯)। উপন্যাসটি পড়তে গিয়ে কখনও কখনও মনে হয়েছে লেখক কিছু বিষয়ে একপাক্ষিক চিন্তা করেছেন অথবা বলা যায় রায়ও দিয়েছেন। যেমন উপন্যাসটি পড়তে গিয়ে কখনও কখনও মনে হয়েছে সব ছেলের বউয়েরাই বোধহয় শাশুড়িদের বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেন। উদাহরণ হিসেবে দেখা যেতে পারে উপন্যাসটির পৃষ্ঠা ৩৩ এবং ৪৯ নম্বর। এবং আরও দুয়েক জায়গায়।
সবিশেষ:
ওভারঅল মাসউদ আহমাদের অন্যান্য মৌলিক গ্রন্থের চেয়ে এটা ভালো। যদিও মাসউদ এটাকেই তার প্রথম গ্রন্থ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। কেন কে জানে! উমমম, আমি মাসউদ আহমাদকে ১০-এর মধ্যে ৭ দিচ্ছি এই উপন্যাসের জন্য।
ওয়েল ডান মাসউদ। আপনার তৃতীয়বারের শুরুটা বেশ ভালো হয়েছে। আরও সামনে এগিয়ে যাবার শুভকামনা থাকলো।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.