গ্রন্থ হিসেবে পাঠ এই প্রথম- সাইয়েদ জামিলের লেখা। পত্র-পত্রিকা-ফেসবুকে বেশ পড়েছি আগে, মনে পড়ে। কাব্যজগতেও আমার বিস্তার খুব বেশি নয়। গুণ ভালো লাগে। ভালো লাগে হেলাল হাফিজ। ভাষার দিক থেকে সর্বাগ্রে ব্রাত্য রাইসু। আমার এই অল্প দৌড়ে কেন আমি জামিলের একটা বই পড়েই বলছি “একক ও অদ্বিতীয়”? যুক্তি আছে। ধীরে বহে মেঘনা- সবই বলবো। বরং শিরোনামটা আমি এভাবে দিতে চেয়েছিলাম- “একক ও অদ্বিতীয় এক গ্রন্থ: নিয়ম না মানা মাস্টার”। দিইনি। কেন? সেটারও তো কারণ আছে।
কিন্তু কোথাকার কোন এক সাইয়েদ জামিল! বলতে পারেন না আপনি। মূল আছে। সেটা জামিল তার লেখায় প্রমাণ রেখেছেন। কোন্ কবি উচ্চারণ করতে পেরেছেন এমন লাইন:
আর, তোমরা আমাকে অশ্লীলতা পরিহার করতে বলো! অথচ,
তোমাদের প্রত্যেকের বাবা তোমাদের প্রত্যেকের মাকে চুদে
চুদেই তোমাদেরকে জন্ম দিয়েছে। আর তোমরা আমাকে
‘চোদা’ শব্দটা লিখতে বারণ করো।
কিংবা এই লাইন দু’টি:
হে মানুষ, ভণ্ডামি চুদি না আমি। আমি পশুদের মতো সহজ
আর অকৃত্রিম।
আবার এই জামিলই উচ্চারণ করছেন-
জেনো, হৃদয়ে আঘাত দেবার নামই সাম্প্রদায়িকতা।
[আমি, আমার মা ও সাম্প্রদায়িকতা: পৃষ্ঠা ১৫]কেন একক ও অদ্বিতীয়?
বইটির পৃষ্ঠা উল্টালেই এরকম কিছু লাইন পাবেন যা আমরা অনুধাবন করি, কিন্তু উচ্চারণ করতে ভয় পাই। কিংবা করি না। পা-চাটাদের দলে নিজেদের আবদ্ধ করে রাখি। আমরা জামিলের মতো “সহজ আর অকৃত্রিম” হতে পারি না। মেকি ভাবনা আর মেকি প্রলেপ আমাদের আবিষ্ট করে রাখে নিয়ত- প্রতিনিয়ত। জামিল পেরেছেন, পারেন এবং পারছিলেনও। তাই আমার দৃষ্টিতে জামিল এখানে একক ও অদ্বিতীয়।
এক নজরে…
বইয়ের নাম: নিয়ম না মানা মাস্টার
লেখক: সাইয়েদ জামিল
প্রচ্ছদ: লমিজা দয়েইসা
প্রকাশক: চৈতন্য
প্রথম প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ২০১৬
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৪৮
মূল্য: ১২৫.০০ টাকা
ভালো লেগেছে:
বইয়ের বেশ কিছু লাইন আমাকে মু্গ্ধ করেছে। আমি বারবার পড়েছি। আবারও পড়বো। লিখতে না হয় নাইবা পারলাম কিন্তু পড়তেতো পারবো। তাই পড়ি। জামিল আমাকে পড়তে বাধ্য করান। ভালো লাগা আরও কিছু লাইন শেয়ার করা যাক এখানে:
মহাবিশ্বের সবকিছুই খণ্ড খণ্ড আমি
[আমি: পৃষ্ঠা ০৯]প্রেমিকা বললো, ‘ক্ষুধা লেগেছে বাবু। পেট
খালি।’ বললাম, ‘পেটে একটা বাচ্চা ঢুকিয়ে
দেই?’ সে বললো, ‘একটা না। দুইটা দাও।’
আমি বললাম, ‘স্পার্ম সহায়।’
…আমার টাইম নাই খোঁপে-আটকা
অধ্যাপক চোদার। আমি জানি, অধ্যাপকেরা
শিক্ষকের ভূমিকায় অভিনয় করা কলোনিয়াল খাটাশ
এছাড়াও ভালো লেগেছে- ‘সাইয়েদ জামিল সম্পর্কে যে যা বললো’, ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বেঁচে থাকলে’, ‘জাহানারাকে ভালোবাসার কারণসমূহ’, ‘বুদ্ধিজীবী’, ‘থ্রেট’, ‘বায়োকেমিস্ট্রি’, ‘আমার বুবস তোমাকে অনেক মিস করবে, জামিল’, ‘টু দ্য গভর্নমেন্ট অব ইন্ডিয়া’ ইত্যাদি কবিতাগুলো।
আর আলাদা করে আরেকটি কবিতার কথা বলা যেতে পারে: “মানুষের মাংস বিষয়ক ধারাবাহিক রচনা”। এই কবিতাটি সম্পূর্ণ আলাদা রস-স্বাদ-গন্ধের একটি লেখা। এরকম রহস্যময় কবিতা বাংলা ভাষায় খুব বেশি দেখেছি বলে মনে পড়ে না এক জীবনানন্দ দাশ ছাড়া।
ভালো লাগেনি:
ভালো লাগেনি “ব্লু-সিটি” নামক কবিতাখানি। জামিল, আপনি কি তাড়াহুড়ো করে লিখেছিলেন এই কবিতা? হতে পারে। কারণ বইয়ের পাণ্ডুলিপি তৈরি করার সময় তিনি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন কবিতা শর্ট পড়েছে। শর্ট পড়লে অসুবিধা কী জামিল? না হয় একটা কবিতা কমই পড়লাম আমরা।
ভালো লাগেনি বইয়ের সাইজ। হয়তো বইয়ের নামের সাথে সামঞ্জস্য রাখার জন্যই সাইজেও কেরামতি করা হয়ে থাকতে পারে। ভালো লাগেনি মূল কভার জ্যাকেটটি আলাদা হওয়ায়। পড়ার সময় এটা বিরক্ত করছিলো আমাকে। আঠা দিয়ে এটা বইয়ের সাথে আটকে রাখা যেতো। এজন্য জামিল কতখানি দায়ী জানা নেই। তবে এদিকটা মূলত প্রকাশকের উপর বর্তালেও যেহেতু বই নিয়ে লিখছি তো এই অধ্যায়টাও চলে আসলো।
সবিশেষ:
এতোদিন সাইয়েদ জামিলের লেখা ফ্রিতে পড়েছি। কিনে এই প্রথম। ঠকিনি বলেই তো মনে হচ্ছে। পড়ার পর আবারও পড়া যায় এমনই মনে হয়েছে আমার কাছে। সুখপাঠ্য। সবচেয়ে ভালো লেগেছে বলতে পারার সাবলিলতা। এদিক থেকে আপনি সফল সাইয়েদ জামিল। ওভারঅল আমি এই কাব্যগ্রন্থটিকে ৭.৫ দিচ্ছি ১০-এর মধ্যে। ভবিষ্যতে যেন ৮ দিতে পারি, ঐটা খেয়াল রাইখেন সাইয়েদ জামিল। শুভকামনা জানবেন।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.