গভীর আবেগ আর সহানুভূতিপূর্ণ আজকের এই পোস্ট। অনুগ্রহপূর্বক মৃত ব্যক্তিবর্গ মানে অ-ব্যাচেলর সাহেবরা পড়বেন না। খবরদার!!!
কেন এই লেখা?
কারণ আমরা ব্যাচেলর। কোনো ভালো বাসা পাই না থাকার জন্য। মেসে-ময়দানে থেকে দিন-রাত উভয়-ই কাটাতে হয়। সে এক দুর্যোগপূর্ণ জীবন। যদিও আমরা সুখী… 🙂
জ্বর/সর্দি/কাশি/নাতির অসুখ/ভাল্লাগে না ইত্যাদি কাবঝাব কারণে মেসের বুয়ারা সপ্তাহে ২/১ দিন রান্নাবান্না থেকে বিরত থাকে। হোটেলে খেতে খেতে জান কোরবান হয়ে যায়। যাদের গ্যাস্ট্রিক আছে তাদের তো কথাই নাই, যাদের নাই তাদেরও হয়ে যায়…
এসব বিবেচনা করে আমার এই আয়োজন। শর্টকাট ওয়েতে কীভাবে নিজের মেসে রান্নাবান্না করে খেয়ে বেঁচে থাকা যায় তার-ই উপায় বের করেছি দীর্ঘ ব্যাচেলর জীবনের গবেষণালব্ধ জ্ঞান থেকে… 😉 ।
চলুন শুরু করা যাক… কথা কম কাজ বেশি… :)। আজ রান্না হবে ডিমের কারি এবং সাদা ভাত।
কি কি লাগবে?
- কাঁচামরিচ ৭টি
- পেঁয়াজ ৪টি মাঝারি
- রসুন ১টি মাঝারি
- গোল আলু ৩টি মাঝারি
- মসুর ডাল (সরু) ৮৫ গ্রাম
- ২টি ডিম
- ২৮০ গ্রাম মিনিকেট চাল
- লবণ
- সয়াবিন তেল
(ভাত) প্রক্রিয়াকর-০১
প্রথমে সাদা ভাত রান্না হবে। সুতরাং চাল মেপে ভালো করে ধুয়ে নিন। পরিমাণ মতো পানিসহ চুলায় বসিয়ে দিন সিদ্ধ হওয়ার জন্য। পানির পরিমাণ বুঝার একটা বুদ্ধি আছে- চালের উপর চার আঙুল পরিমাণ পানি থাকবে… 🙂
মোটামুটি ২০ মিনিটের মধ্যেই চাল ফুটে ভাত হয়ে যায়। ভাত হতে থাকুক। ইতিমধ্যে আমরা অন্যান্য কাজ করে ফেলি।
(কাটাকাটি) প্রক্রিয়াকরণ-০২
আলুর চামড়া ছাড়িয়ে নিন। পেয়াজ এবং রসুনের চামড়াও ছাড়িয়ে নিন। কাঁচামরিচের ডাঁট ফেলে দিন। এগুলো একটা প্লেটে নিয়ে ধুয়ে নিন। ডাল আর একটা প্লেটে নিয়ে ধুয়ে নিন।
এবার আলু কুচি কুচি করে কেটে নিন। পেয়াজ এবং রসুন কেটে নিন। দুটি মরিচ কুচি কুচি করে কাটুন। বাকী পাঁচটির মাঝখানে কেটে ভাগ করে আলাদা রাখুন। এবার আলু আর ডাল একসাথে রাখুন। ছোট একটি প্লেটে মরিচ কাটা, রসুন কাটা এবং পেঁয়াজ কাটা রাখুন।
এবার চুলার কাছে চলে আসুন। ভাত ফুটছে দেখুন। চামচ দিয়ে ভাত একটু নেড়ে দিন। চুলাটা আর একটু কমিয়ে দিন।
(ডিমের ফ্রাই) প্রক্রিয়াকরণ-০৩
চুলায় ফ্রাইপেন বসিয়ে দিন। গরম হলে তেল ঢেলে তেল গরম হতে দিন।
ডিম দুটি ফাটিয়ে একটা প্লেটে নিন। সেখানে পরিমাণমতো লবণ দিন। সেই সাথে কুচি কুচি করে কাটা মরিচ দুটি দিন। কুচি কুচি করে কাটা পেঁয়াজ দিন। তারপর ভালো করে মাখিয়ে নিন/ফেটিয়ে নিন।
খেয়াল করুন তেল খুব গরম হয়ে গেছে। সাবধানে তেলে ডিম ছেড়ে দিন। চামচ দিয়ে নাড়িয়ে নাড়িয়ে ভালো করে ফ্রাই করে নিন। চামচ দিয়ে কেটে কেটে ফ্রাই ডিম ছোট ছোট করে নিন। ফ্রাইপ্যান নামিয়ে রেখে একটি কড়াই বসিয়ে দিন চুলায়।
খেয়াল করুন ভাত ফুটে গেছে। চামচ দিয়ে আর একবার ভাত নেড়ে দিয়ে ভাতের মাড় ঝরিয়ে নিন। এই কাজটা সাবধানে করুন। মাড় হাতে লেগে হাত পুড়ে যেতে পারে!
(তরকারি) প্রক্রিয়াকরণ-০৪
এবার মূল রান্না। এই পর্বেই রান্না শেষ হবে।
কড়াই ইতোমধ্যে গরম হয়ে গেছে। কড়াইয়ে পরিমাণমতো তেল দিন। তেল ফুটতে থাকলে তেলে পেঁয়াজ, রসুন, কাঁচামরিচ ছেড়ে দিন। পরিমাণমতো লবণ দিন। পেঁয়াজের রঙ বাদামি হওয়া পর্যন্ত ভাজতে থাকুন। তারপর কড়াইয়ে মসুর ডাল এবং আলু ছেড়ে দিন। হালকা আঁচে ভাজতে থাকুন। চুলার আগুন খুব কমিয়ে দিয়ে ঢাকনা দিয়ে কড়াই ভালোভাবে ঢেকে দিন। এভাবে ৫-৭ মিনিট রেখে দিন।
এই ফাঁকে অন্য চুলায় একটি পটে হাফ লিটার পানি বসান গরম হওয়ার জন্য। ভাতের হাড়ি রুমে নিয়ে যান। প্লেট ধুয়ে নিন। শুধু লবণ ছাড়া বাকী সবকিছু রুমে নিয়ে নিন।
ঢাকনা তুলে ডাল-আলু নেড়ে দিন। কড়াইটা ঘুরিয়ে দিন বারবার। কারণ সাধারণত গ্যাসবার্নারগুলোতে সবদিক থেকে সমানভাবে আগুন উঠে না… :(।
মোটামুটি ভাজা শেষ হয়ে গেলে গরম পানি ঢেলে দিয়ে ভালো করে নেড়ে দিয়ে ভালোভাবে ঢেকে দিন।
এভাবে আরও ৭ মিনিট রেখে দিন। ৭ মিনিট পর আবারও নেড়ে দিন। লবণ চেখে দেখুন। ফ্রাই করে রাখা কুচি কুচি ডিম তরকারিতে ছেড়ে দিন। আবারও ঢেকে দিন। এভাবে ৫ মিনিট রাখুন। তারপর তুলে রুমে নিয়ে যান।
দেখুন আপনার সময় ব্যয় হয়েছে মাত্র ৪০-৪৫ মিনিট। হোটেলে গিয়ে খেয়ে আসতেও এমন সময়-ই লাগে।
খাবার পালা… 🙂
ভালোভাবে হাত-মুখ ধূয়ে নিন। ফ্যানের নিচে একটু বসুন। দেরি না করে গরম গরম খেয়ে নিন। দেখুন কত সুস্বাদু খাবার!
সাবধানতা
আগুনের ছ্যাকা লাগা থেকে সাবধান থাকুন। ঘরে বার্নল প্লাস রাখুন।
তাহলে আজ এ পর্যন্তই থাক… ও হ্যাঁ, এখানে দু’জন খাওয়ার মতো পরিমাণ বলা হয়েছে। আপনি একা হলে বা বেশিজন হলে পরিমান কমিয়ে/বাড়িয়ে নিতে পারেন। ভালো থাকুন, সাথে থাকুন… 🙂
বাবর says
আমি সবসময় রান্না করেই খাই, বুয়া রাখা হয় নাই 😛
Pantho Bihosh says
ওহ! তাই নাকি বাবর ভাই? তাহলে ২/১টা রেসিপি শেয়ার কইরেন আমাদের জন্য… 🙂 আমরা দুই ফ্রেন্ড এই মাসের ৪ তারিখ থেকে নিয়মিত রান্না করে খাচ্ছি… 😀
Mark Biplob says
আমি কিন্তু সব ধরনের রান্না বান্নাই করতে পারি এবং খুবই সুস্বাদু তা। অনেক চাইনিজ রান্নাও শিখেছি আমি।
Pantho Bihosh says
খাইছে! তাই নাকি? তবে… ইয়ে… সুস্বাদু কিনা বুঝবো কিভাবে? দাওয়াত করে খাওয়ান… 🙂 তাইলেই বুঝতে পারবো… 😛
Mark Biplob says
চলে আসেন একদিন আমি রেডি 🙂
Monindra says
well…..
সালেহীন শিপ্রা says
ট্রাই করবো ৷ লেখার ধরনটা দারুণ ৷ পড়েই মজা পেলাম ৷
পান্থ বিহোস says
জানাবেন, রান্না কেমন হলো?