অরণী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন। থাকেনও হলেই। প্রতি বছর শীতের মৌসুম এলেই একটা ভালো লাগার শিহরণ জাগে তার মনে। শীত মানেই বাড়তি আনন্দ। বেড়ানোর আনন্দ। খাওয়া-দাওয়ার আনন্দ। কীভাবে?
জানা গেলো অরণীর মুখ থেকেই- ঢাকা শহরে সূর্যের মুখ দেখা যায় না বললেই হয় নগরায়নের প্রভাবে। কিন্তু ক্যাম্পাসে সে সুযোগ আছে। যেদিন সকালের দিকে ক্লাস থাকে সেদিন ক্লাসের আগে ক্যাম্পাসের খোলা যায়গায় দাড়িয়ে রোদের তাপ অনুভব করা যায় কোনো কোনো সকালে। আর এই ব্যাপারটা অরণী খুবই উপভোগ করেন।
লাবিব ইন্তেখাব পড়েন ঢাকার একটা বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে। শীতের ব্যাপার আলাদাভাবে সে কখনো ভাবেনি। তবে এই সময়টায় সবাই মিলে বেড়াতে যান। ক্যাম্পাসে তেমন কিছু হয়না বলেই জানালেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়নে তরুণ হাবীব। তিনি খুব জোর গলায় বললেন- একমাত্র জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই শীতের প্রকৃত ব্যাপার বোঝা যায়। আর তাই শীত উদযাপন, অনুভব এখানেই সম্ভব। পিঠা উৎসব, শীতের ফ্যাশন, অতিথি পাখি দেখার আয়োজন সবই চলে এখানে। মোটের উপর শীত এখানে বাস্তব চোখে দেখা যায়। এছাড়াও সাংস্কৃতিক দলগুলোও এই সময়ে তাদের কার্যক্রম বাড়িয়ে দেন। এবং সেসব চলতে থাকে শীতকালীন ছুটি হওয়ার আগ পর্যন্ত।
শীত কী?
শীত একটা ঋতুর নাম। বাংলা বারো মাসের ছয়টি ঋতুর একটি হলো শীত এ কথা সবাই জানেন। পৌষ এবং মাঘ এই দুই মাস শীতকালীন সময় ধরা হলেও মোটামুটি অগ্রাহয়ণ থেকেই শীতের প্রকোপ বাড়তে থাকে। সময়ের বিবর্তনে এখন সব ঋতু পুরোপুরি বোঝা না গেলেও শীত, গ্রীষ্ম এবং বর্ষা এখনো বাংলাদেশে আলাদাভাবে বোঝা যায়। শীত যদিও কোনো উদাযাপনের বিষয় নয় তবুও একে অনুভব করেন একেকজন একেকভাবে। এখানেই পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে আমাদের দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ-তরুণীদের রঙিন মনে শীতের দোলায় বসন্ত জেগে উঠে। আসলেই তাইÑ শীত তো বসন্তের আগমন বার্তা-ই। তাই না?
শীত উদযাপন কীভাবে?
চিন্তা-চেতনা আর ভাবনার জগত সবার এক নয়। সবাই সব কিছু নিজের মতো করেই করেন। বিভিন্ন ক্যাম্পাস ঘুরে, খোঁজ-খবর নিয়ে যতোটুকু জানা যায় এতে করে শীত উদযাপন বা অনুভব এভাবে ভাগ করা যায়-
- বেড়ানো
- পিঠা উৎসব
- অতিথি পাখি দেখা
- শীতবস্ত্র বিতরণ
- সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড
তবে এর মধ্যে বেড়ানো এবং শীতবস্ত্র বিতরণ কর্মকা- দু’টি সাধারণত ঢাকার বাইরেই হয়ে থাকে। আর অতিথী পাখি দেখার ব্যবস্থা শুধুমাত্র জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েই রয়েছে।
১. বেড়ানো: এই সময়টায় মোটামুটি সবাই-ই বেড়াতে যান কোথাও না কোথাও। কেউ দূরে কেউ কাছে। শুরুটা ক্যাম্পাসেই হয়। তবে এমনও হয় যে, এক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বন্ধুরা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসেও বেড়াতে যান। এই আয়োজনে জাাহঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়-ই সাধারণত হোস্ট হয়ে থাকেন। কারণ এই ক্যাম্পাসে অতিথী পাখি দেখার ব্যবস্থা আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুরাই শীতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রদার্পণ করেন।
২. পিঠা উৎসব: শীতের আয়োজনে পিঠা খাওয়ার ধুম পড়ে যায় প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই। পিঠা উৎসব উদযাপন উপলক্ষ্যে আয়োজন করা হয় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালাও। কেউ কেউ আবার পথশিশুদের নিয়ে করে থাকেন এই পিঠা খাওয়া উৎসব। ফলে ক্যাম্পাসের বাইরেও একটা দায়িত্ব পালন হয়ে যায় বলেন মনে করেন সবাই।
৩. অতিথি পাখি দেখা: সুদূর সাইবেরিয়াসহ বিশ্বের দূর-দূরান্ত থেকে এই সময়ে বাংলাদেশে আসে হাজার-লক্ষ পাখি। এরা সবাই অতিথি পাখি। রঙ-বেরঙের পাখি এসে আমাদের বিল-হাওড়গুলো প্রাণচঞ্চল আর সৌন্দর্যময় করে তুলেন। যা দেখতে প্রকৃতিপ্রেমিকরা হন্য হয়ে ওঠেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকসমূহেও প্রতিবছর হাজার হাজার অতিথি পাখি আসে। সেগুলো দেখাও হয় আয়োজন করে। ক্যাম্পাসের সবাই-ই তো বটেই, অন্যান্য ক্যাম্পাসের বন্ধুরাও আসেন এই সময়ে।
৪. শীতবস্ত্র বিতরণ: আমাদের দেশের উত্তরে রয়েছে হিমালয় পর্বত। হিমালয় পর্বত বেয়ে প্রতিবছরই আসে শীতের হিমবাহ। দরিদ্রকবলিত উত্তরাঞ্চলে তাই প্রতিবছরই শীতের প্রকোপ থাকে প্রকা-। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ-তরুণী ছাত্র-ছাত্রীরা তাই শীত বস্ত্র সংগ্রহ করেন প্রতি বছরই। যা বিতরণ করা হয় সুদূর উত্তরাঞ্চলে। এই উপলক্ষ্যে প্রতি বছরই আয়োজন করা হয় নানামুখী প্রচারণা। যাতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোর সবাই-ই অংশগ্রহণ করেন স্বত্বস্ফূর্তভাবে।
৫. সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড: বছরের এই সময়ে ক্যাম্পাসের সাংস্কৃতিক দলগুলো তৎপর হয়ে ওঠেন। উদযাপন হয় শীতকালীন নাটক দেখা থেকে শুরু করে নানামুখী সাংস্কৃতি কর্মকাণ্ড। রোভার স্কাউট, বিএনসিসিসহ নানা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো উদযাপন করেন তাবু ঝলসা এবং নানারকম অনুষ্ঠান। টিএসসিগুলোতেও সাংস্কৃতিক কর্মীরা ভীড় করেন এই সময়ে।
এছাড়াও বার্ষিক খেলাধুলার আয়োজন এই সময়েই হয়ে থাকে। সব মিলিয়ে শীতের এই সময়টা সবার মাঝেই একটা উৎসবমুখর পরিবেশ হয়ে থাকে। তাছাড়া সামনে থাকে শীতকালীন ছুটি, তাই যেনো সময় উপভোগের কৃপনতা কেউ-ই করেন না।
সর্বশেষ
শীত মানে শুধুই উপযাপন বা উৎসব নয়। যারা শীতে কাতর হয়ে ঠকঠক করে কাঁপেন, তাদের দিকে ফিরে তাকানও ক্যাম্পাসের ছাত্র-ছাত্রীরা নৈতিক দায়িত্ব বলেই মনে করেন। তাইতো, প্রতি বছর নিজের আনন্দের পাশাপাশি দুখীদের কথাও ভোলেন না তারা।
নিজের সবটুকু শক্তি নিয়েই ঝাঁপিয়ে পড়েন সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে। হাসি ফুটে তাদের মুখে। সেই ঠোঁট ফাটা এক চিলতে হাসিটা, যেটা কষ্ট করে বেরিয়ে আসে কোনো বঞ্চিত কিশোরী বা কিশোরের ঠোঁটের কোনা দিয়ে; সেই হাসির রেশ-ই তখন মধু মনে হয়। আর সেটাকেই ক্যাম্পাসে শীত উদযাপনের প্রকৃত আনন্দ বলে মনে করেন প্রায় সব ক্যাম্পাস বন্ধুই। ফুটুকু হাসি সবার মুখে, থাকুক পাশে তাদের দুখে। জয়তু ক্যাম্পাস বন্ধু। জয় হোক আপনার সদিচ্ছার।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.